ভারতের বিদেশনীতি ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা । কিন্তু সেই কূটনীতি নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে । মোদি এ যাবৎকালের ভারতের প্যালেস্তাইননীতি ‘ঐক্যবদ্ধ স্থায়ী’ প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র গঠন সম্পর্কে ঘোষিত নীতি থেকে বিচ্যুত হয়েছেন। প্যালেস্তিনীয়দের জেরুজালেমের ওপর যে দাবি রয়েছে সেই প্রসঙ্গ উহ্য রেখে মোদি ভিন্ন বার্তা দিয়েছেন। সেইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে চিন ও পাকিস্তানের সঙ্গে সমস্যা অমীমাংসিত রাখাও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ। চিন ও পাকিস্তান কাছাকাছি হওয়া মানে কাশ্মীর ইস্যু জিইয়ে রাখা।
অন্যদিকে সিকিম, তিব্বত, ভুটানের ত্রিমুখী সংযোগে স্ট্র্যাটেজিক ডোকালাম এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সীমান্তে চিনের তৎপরতাও ভারতের জন্য চাপের । ২০১৬ সালে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে হিজবুল মুজাহিদিন কমান্ডার বুরহান ওয়ানি নিহত হবার পর থেকেই গোটা কাশ্মীর উপত্যকায় যেমন উত্তাপ বেড়েছে, কাশ্মীরের তরুণ সম্প্রদায়ের জঙ্গিদলের প্রতি ঝোঁকও বেড়েছে। এই প্রবণতা রোধ করতে না পারার জন্য কিন্তু কেন্দ্র সরকারের জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে ।
কাশ্মীর এবং সেই সংক্রান্ত সমস্যাটা ঐতিহাসিক । ফলে তার সমাধান হওয়া দরকার বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি
থেকে । কিন্তু অধিকাংশ সময়েই সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি জাতীয়তাবাদী এবং বর্তমান সরকারের ক্ষেত্রে তা
উগ্র। এর প্রভাব পড়েছে জঙ্গিপনা এবং পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণার মানসিকতায়। একথা ঠিক যুব সম্প্রদায়ের জঙ্গি সংগঠনের দিকে ঝোঁক বা সেই দলে অংশগ্রহণের পিছনে সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কারণ থাকে । কাশ্মীরের ছাত্র ও যুব সম্প্রদায়ের জঙ্গিদলে নাম লেখাবার পিছনেও রাজনৈতিক তথা সামাজিক অবক্ষয় কাজ করছে । প্রত্যাশা অপূর্ণ থেকে যাওয়ায় অসন্তোষ আর তারই
বহিঃপ্রকাশ ঘটে হিংসাত্মকভাবে ।
কিছুকাল আগে দুই বিপরীত রাজনৈতিক শক্তির জোট সরকার উপত্যকা শাসন করেছে। এতেও কাশ্মীরের জনগণ সামগ্রিকভাবে বিভ্রান্ত হয়েছে। তারা মনেই করেছে, দু’টি বিরুদ্ধ শক্তির জোট-সরকার তাদের রাজনৈতিক আশা পূরণ করতে পারবে না। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার জোট ভেঙে ক্ষমতা নিজের হাতেই রেখেছে ।
কাশ্মীরে লাগাতার বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, পাথর ও গুলি বর্ষণ, প্রাণহানি ইত্যাদি ঘটনায় পাকিস্তান এবং
জঙ্গিবাদের তীব্র সমালোচনার পরও কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে বলে জাতিসংঘ মন্তব্য করেছে। যার মধ্যে রয়েছে আন্দোলন দমন করতে অত্যধিক বল প্রয়োগ করা, আইন বহির্ভূত
হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারভাবে গ্রেফতার করা, যৌন হিংসা, গুম ইত্যাদি । একমাত্র কাশ্মীরেই মাথাপিছু হারে এত সৈন্য; দুনিয়ার আর কোথাও যা নেই। কাশ্মীরে সেনা সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ। অর্থাৎ কাশ্মীরে প্রতি একলাখ মানুষের জন্য সৈন্য সংখ্যা হল প্রায় ৫ হাজারের ওপরে । যে গ্রামে ২০০ ঘর মানুষের বাস সেখানে প্রায় ২৫ জন সৈন্য। ব্রিটিশ শাসকও গোটা ভারত শাসনে এত ইংরেজ সৈন্য রাখেনি যা এখন রয়েছে কাশ্মীরে।
কাশ্মীরে গত পাঁচ বছরে সংঘর্ষ, সন্ত্রাসবাদী ঘটনা, বিক্ষোভ এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে সব থেকে বেশি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত উপত্যকায় ২৪৩ জন সন্ত্রাসবাদী
খতম হয়েছে, শেষ ১০ বছরে যা সর্বাধিক । সন্ত্রাসবাদীদের মৃত্যুর পাশাপাশি লাফ দিয়ে বেড়েছে বিক্ষোভ এবং সন্ত্রাসের ঘটনাও। ২০১৭ তে মোট ৩৪২টি সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা ঘটলে ২০১৮তে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২৯। কিন্তু সব ঘটনাকে ছাপিয়ে গিয়েছে সাধারণ মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু। আক্ষরিক অর্থে ভূস্বর্গ হয়ে উঠেছে হিংসা আর মৃত্যুর উপত্যকা।
ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরে বিদ্রোহীদের দমন করতে কখনো সন্ত্রাস রুখতে কখনো আবার জঙ্গি খতম করতে নিত্য নতুন অভিযান চালিয়েছে উপত্যকায়। তাতে যাওয়ার মধ্যে গিয়েছে নিরীহ গ্রামবাসীর ঘরদোর, মা বোনের ইজ্জত আর গরিব মানুষের প্রাণ । নতুন দিল্লি অভিযোগ তুলেছে ইসলামাবাদের মদতে জঙ্গিরা নিয়ন্ত্রণরেখা পার হয়ে ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে, তাদের আশ্রয় দিচ্ছে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ। সেই উপত্যকাবাসীর মনের ঠিকানা আজও অধরা ও অজানা |
8 Responses
তাহলে জঙ্গিদের দমন করতে কিংবা দেশদ্রোহিদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেবে দেশ? কি হওয়া উচিত দেশের নীতি?
ভাল বিশ্লেষণ।
eta lekhoker mat er sange ami ekmat noi tabu balbo tar bishleshon valo ebong tini tar jukti besh valovabei uposshapon korechhen.
পাকিস্তান কাশ্মির উপত্যকায় বরাবরই শান্তি বিঘ্নিত করার চেষ্টা করে, বলা ভাল ওরা জঙ্গি জন্ম দেয় এবং মদত দেয় আমাদের শান্তি ভঙ্গ করতে আর কাশ্মিরের লোক ভারতে বসে পাকিস্তানের হয়ে সব ধরণের চক্রান্তে সাহায্য করে-এটা বরদাস্ত করা যায় না।
বেশ লিখেছেন, খুবই ভাল এবং ঠিকঠাক।
যে রাজ্যে কৃষি, শিল্প, কিছুই নেই সেই রাজ্যের মানুষ কি শুধু সেনাবাহিনীর মুখ দেখবে আর গোলা বারুদ খাবে? কাশ্মির নিয়ে এই খেলা তো যুগ যুগান্ত কালের। কাশ্মিরের মানুষরা সেদিক থেকে নিরীহ বলা যায়।
voter rajniti katota niche namte pare seta valo kare dekha gelo, kintu amra sadharon manush ki shikshya pelam? naki bar bar deshprem kimba annya kichhute mete utthbo; hay amader chetana ze kabe habe!
কয়েকদিন ধরে দৈনিকের পাতায় আর বোকা বাক্সে চোখ রাখা যাচ্ছিল না দেশপ্রেম আর দেশপুজোর জোয়ারে। মনে হচ্ছিল দুনিয়া থেকে সব ধরনের চিন্তা-ভাবনার শক্তি উধাও হয়ে গেল। ব্যাখ্যা- বিশ্মেষণ ইত্যাদি মনে হচ্ছিল আমরা ভুলে গেছি। এই লেখাটা ঠিক সেই সময় পড়ে মনে হচ্ছে নিশ্চয় এমন ব্যাখ্যা-বিশ্মেষণ আরও আছে। এই বিষয়ের ওপর আরও লেখা দরকার।