এসে গেল শীতকাল। হাজারো খাওয়াদাওয়া আনন্দ-উৎসব নিয়ে শীতকাল জমজমাট। কিন্তু আবার শীতকালের সঙ্গে আসে কিছু অসুখবিসুখ। আর এই সময় সব থেকে বেশী আক্রান্ত হয় বাচ্চারা | শীতকালে সাধারণত যেসব অসুখ হানা দেয় সেগুলো হল – সর্দি -কাশি, অ্যাজমা, গলা ব্যথা, ত্বকের শুষ্কতা, টন্সিল ইনফেকশন, উকুন, কানে ইনফেকশন, ব্রঙ্কিওলিটিস, হাত – পা – মুখে নানান ইনফেকশন, চিকেন পক্স ইত্যাদি। এই সমস্ত শীতকালীন অসুখ থেকে কচিকাঁচাদেরকে সুরক্ষিত থাকার কিছু পন্থার কথা জেনে নেওয়া যাক।
১) সর্দি -কাশি
লক্ষণ – দুর্বল হয়ে পড়া, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট , মাথাব্যথা হওয়া, গায়ে হাত পায়ে ব্যথা হওয়া, কাশি হওয়া এবং অরুচি হওয়া।
কারণ – সাধারণত বাচ্চাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হলে আবহাওয়ার পরিবর্তনের জন্য অথবা অন্য কোনও অসুস্থ মানুষের সংস্পর্শে এলে বাচ্চাদের এই সমস্যা দেখা দেয়।
সাবধানতা – ঠান্ডা লাগার মতো খাবার বাচ্চাদেরকে না দেওয়া উচিৎ। রাত্রিবেলা কলা বা দই জাতীয় খাবার দেওয়া উচিৎ নয়। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন কমলালেবু, আনারস, বাদাম বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
সাধারণ চিকিৎসা – তুলসী পাতা, গোলমরিচ, কুচো করা আদা, মধু মিশিয়ে বানানো মিশ্রণ বাচ্চাদেরকে খাওয়ালে এই সমস্যাগুলোর উপশম হতে পারে। এছাড়াও বাচ্চাকে প্যারাসিটামল খাওয়ানো যেতে পারে।
২) টনসিল ইনফেকশন
লক্ষণ – গলায় ব্যথা হওয়া, টন্সিল ফুলে যাওয়া, খাবার বা তরল খেতে কষ্ট হওয়া।
কারণ – ঠান্ডা কিছু খেলে অথবা ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার জন্য এই সমস্যা হতে পারে।
সাবধানতা – কোনো ঠান্ডা খাবার বাচ্চাকে দেওয়া উচিৎ নয়। খুব বেশি হাওয়া দিলে বাচ্চাদের কান ও গলা ঢেকে রাখা উচিৎ।ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো প্রয়োজন। উষ্ণ গরম জলে নুন দিয়ে গার্গল করালে উপকার হতে পারে।
সাধারণ চিকিৎসা – ঈষৎ উষ্ণ গরম জলে নুন দিয়ে গার্গল করানো উচিৎ।
৩) উকুনের সমস্যা
লক্ষণ – মাথা চুলকোতে থাকা, মাথাব্যথা, মাথার স্ক্যাল্প লাল হয়ে যাওয়া, বা মাথায় কিছু নড়াচড়া করছে এরকম অনুভব করা।
কারণ – চুলের অযত্ন, এমন কোনও মানুষের কাছে থাকা যার মাথায় উকুন আছে।
সাবধানতা – যাদের মাথায় উকুন আছে তাদের থেকে বাচ্চাকে সরিয়ে রাখা দরকার বা তাদের জিনিসপত্র বা চিরুনি বাচ্চাদেরকে ব্যবহার করতে দেওয়া উচিৎ নয়।
সাধারণ চিকিৎসা – উকুন – নিরোধক শ্যাম্পূ ব্যবহার করা। নিয়মিত চুল আঁচড়ানো। যথাযথভাবে চুলের যত্ন নেওয়া। বিছানা, তোয়ালে এবং চিরুনি পরিষ্কার রাখা।
৪) ব্রঙ্কিওলিটিস
লক্ষণ – দুবছর বা তার কম বয়েসের বাচ্চাদের ভাইরাস সংক্রমণের জন্য ফুসফুসজনিত এই রোগটি দেখা দেয়।
কারণ – মূলত এটি একটি ভাইরাল ইনফেকশন এবং বাহিত রোগ। কারোর এই রোগটি থাকলে এবং বাচ্চা তার সংস্পর্শে এলে এই রোগটি ছড়ায়।
সাবধানতা – খাবার আগে হাত ধোয়া। বহুব্যবহৃত জিনিসপত্র ব্যবহার না করা অথবা ব্যবহার করলেও ব্যবহারের পরে হাত ভালোভাবে ধুয়ে ফেলা। দুষিত পরিবেশে বা ভিড় জায়গায় বাচ্চাদের মাস্ক পরিয়ে রাখা। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হলে বাচ্চাদেরকে ভাপ নেওয়ানো।
সাধারণ চিকিৎসা – সত্বর বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন।
৫) চিকেন পক্স
লক্ষণ – বসন্তের শুরু পর্যন্ত বায়ুবাহিত রোগগুলি হাওয়ায় খুব সক্রিয়ভাবে বাহিত হতে থাকে। বিশ্বের অন্যতম সংক্রামক রোগগুলির মধ্যে অন্যতম একটি হল চিকেন পক্স। এক্ষেত্রে বাচ্চাদের গায়ে লাল লাল চাকা চাকা দাগ বা র্যাশের মতো দেখা যায় এবং এগুলি চুলকোতে থাকে।
কারণ – এটি বায়ুবাহিত রোগ। হাওয়ায় এর জীবাণু থাকলে দেহে তার সংক্রমণ ঘটে। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলেও এই রোগটি ছড়ায়।
সাবধানতা – সময়মতো ভ্যাক্সিন দেওয়ানো এবং আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে দূরত্ব বজায় রাখা। ঘরে বা স্নানের জলে নিমপাতা দিয়ে রাখলে উপকার পাওয়া যায়।
সাধারণ চিকিৎসা – প্রাথমিক স্তরে ধরা পড়লে সেরে যায়। চুলকোনোর বদলে যেখানে চুলকোচ্ছে সেখানে অল্প চাপ দেওয়া উচিৎ। বাড়াবাড়িতে অবশ্যই সত্বর বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন। আক্রান্তের ব্যবহৃত জামাকাপড় আলাদা রাখা দরকার।
৬) পেটের গন্ডগোল
লক্ষণ – পেটে ব্যথা, ডায়েরিয়া, বমি হওয়া, জ্বর।
কারণ – নোংরা খাবার ও জল খাওয়া। হাত না না ধুয়ে খাবার খাওয়া। ডায়েরিয়া সেরে যাবার কয়েক সপ্তাহ পরেও ইনফেকশন বাচ্চার শরীরে থাকতে পারে।
সাবধানতা – খাবার সময় পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা দরকার। খাবার আগে হাত ভালোভাবে ধুয়ে ফেলা আবশ্যিক।
সাধারণ চিকিৎসা – বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন। বাচ্চাকে তরল পান করানো এবং হাইড্রেটেড রাখা জরুরি।
৭) হাত‚ পা ও মুখের ইনফেকশন
লক্ষণ – মুখের মধ্যে ঘা, ব্যথা। হাতের তালুতে বা আঙুলের নানা জায়গায় ফুলে যাওয়া। পায়েরও নানা জায়গায় ফুলে যাওয়া। বাচ্চার খেতে বা জল খেতে বা হাঁটতে সমস্যা হওয়া।
কারণ – এটি বাহিত রোগ। অপরিচ্ছন্নতার জন্যে সাধারণত হয়।
সাবধানতা – টক, ঝাল খাবার বাচ্চাদেরকে না দেওয়া দরকার। অসুখ সেরে যাবার কয়েক সপ্তাহ পরেও ভাইরাস বাচ্চার শরীরে থাকতে পারে। তাই ডাইপার বদলানোর পরে হাত ভালোভাবে ধুয়ে ফেলা আবশ্যিক। পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা প্রয়োজন।
সাধারণ চিকিৎসা – বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন