আমাদের কেদার-বদ্রী যাওয়াটা হয়েছিল ২০০৪ সালের মে মাসে | ঠিক তার আগের বছরই উত্তরাঞ্চল ঘুরতে গিয়ে রুদ্রপ্রয়াগে বসে আমরা এই প্ল্যানটা করে ফেলি | ১৪ কিলোমিটার পথ পাহাড়ে চড়ার ব্যাপারে গিন্নি কোনও আপত্তি করেনি আর বুবুলের তখন ১১ বছর ফলে অ্যাডভেঞ্চারের গন্ধ পেয়ে একেবারে নেচে উঠেছিল |হাওড়া থেকে উপাসনা এক্সপ্রেস চালু হয়েছে‚ আজকে দুপুরে উঠলে পরের দিন বিকেলে হরিদ্বার | কিন্তু আমাদের মন্দ কপাল‚ মাঝপথে ট্রেন বিগড়ে যাওয়ার ফলে হরিদ্বারে নামলাম রাত দশটায় |

খুব একটা অসুবিধে হলো না‚ গাইড আর হোটেলের দালালগুলো সব আমাদের জন্য হাপিত্যেশ করে বসেছিল | আমরা পরদিন কেদার রওয়ানা হব শুনে ওরাই বলল আগে গাড়ি বুক করে নিতে.|স্টেশনের সামনেই সরকারি বুকিং কাউন্টার অত রাতেও খোলা | এখানে বাঁধা রেট এবং এরা বিশ্বস্ত ফলে আগাম টাকা দেওয়া হলো | হেটেলের এক দালাল আমাদের পাকড়ালো না আমারা ওকে পাকড়ালাম মনে নেই তবে সাইকেল রিকশাতে মালপত্তর তুলে ছেলেটির সঙ্গে আমরা চললাম | কোন হোটেল সেটা কাউন্টারে জানিয়ে আসা হলো‚ পরদিন সকাল ছ‘টায় গাড়ি আসবে | কয়েক ঘন্টার মামলা ফলে ঘুম তেমন হলো না‚ চারটে বাজতে না বাজতেই দেখলাম সকাল হয়ে গেছে | হরিদ্বার থেকে গাড়ির রাস্তা গেছে প্রায় ২৫০ কিমি দূরে গৌরীকুণ্ড অবধি তারপর পাহাড় বেয়ে কেদারনাথ |

একজন বিচক্ষণ বন্ধুর কথায় রামঘিঞ্জি গৌরীকুণ্ডে না গিয়ে আমরা রাতে থেকে গেলাম ২০ কিমি দূরে শোনপ্রয়াগে | এই আট ঘন্টা জার্নির ফাঁকে গুপ্তকাশীতে লাঞ্চ সারা হয়ে গিয়েছিল | পরদিন সকাল ৭টার মধ্যে গাড়ি আমাদের গৌরীকুণ্ডে পৌঁছে দিল |ছোট্ট জায়গাটা দোকানপাট আর তীর্থযাত্রীদের ভিড়ে থিক থিক করছে‚ অনেক কষ্টে ঠেলেঠুলে গরম জলের চৌবাচ্চাটার কাছে গিয়ে দেখি সেখানে রীতিমত দক্ষযজ্ঞ চলছে |

আমরা মানে মানে কেটে পড়ে ২০ টাকায় এক একটা লাঠি ভাড়া করে নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম | নেহাত গরিব-গুর্বো কিছু লোক ছাড়া এহেন কুকম্মো কেউ করে না‚ শয়ে শয়ে ঘোড়া আর ডুলি মজুত রয়েছে‚ শরীর নাচাতে নাচাতে সব চলেছে‚ ছেলে ছোকরা আর দামড়া সাধুগুলোও বাদ যায়নি | গোটা রাস্তা সহিসের দল ঘোড়া নেবার জন্য ঝুলোঝুলি করে আমাদের ট্রেকিং-এর আনন্দ অনেকটাই মাটি করে দিল |
প্রায় অর্ধেক পথ পেরিয়ে গিয়ে রামবাড়া‚ এখানে দুপুরের খাওয়া সেরে এবার বেশ চড়াই ভাঙতে হলো | চারদিকে ঘিরে রয়েছে বিশাল বিশাল পাহাড় আর অন্যদিকে অনেক নীচে বয়ে চলেছে অলকানন্দা নদী‚ পথের ধারে ছোট ছোট দোকানগুলোতে চা খেতে বসলে আর উঠতে ইচ্ছে করে না |

কিছুটা হালকা চালে হেঁটেও আমরা বেলা তিনটের মধ্যে কেদারনাথ পৌঁছে গেলাম | মন্দিরের কাছে গিয়ে ছেলে আর গিন্নি হাতের লাঠি উঁচিয়ে যেভাবে “জয় কেদার“ বলে হাঁক ছাড়ল বুঝলাম এনার্জিতে বিশেষ টান পড়েনি |
ভারত সেবাশ্রমে দু‘দিনের বুকিং ছিল | তবে থাকার জন্য ‘কালি কমলি‘ বা ‘বিড়লা গেস্ট হাউস‘ বেশি ভাল | বিকেলে খিদের মুখে চানা মশলা আর পরোটা খেয়েছিলাম‚ এরপর মাথা সামান্য ভার হতে লাগল | সেই সঙ্গে কনকনে ঠান্ডা | ফলে মন্দিরের আরতিটুকু দেখে আমরা সেদিনের মতো কম্বলের নীচে ঢুকে পড়লাম |

পরদিন সকালে উঠে মন্দিরের চারপাশের পাহাড়গুলোতে টহল দিলাম – এদিকটাতে লোক কম আসে ফলে বেশ নিরিবিলিতে বসে উঁচু বরফ ঢাকা পাহাড়ের দৃশ্য উপভোগ করা যায় | সিজনে নীচ থেকে এসে যারা দোকান চালায় তাদের ছেলেপুলেরাও গরমের ছুটিতে এখানে এসে হইহুল্লোড় করে ক্রিকেট খেলে | বুবুল দিব্যি এদের সঙ্গে ভিড়ে গিয়ে ছক্কা-টক্কা হাঁকিয়ে বেচারিদের গোটা কয়েক বল হাওয়া করে দিল | অন্যদিকে গিন্নি মন্দিরে পুজো-টুজো দিয়ে এসে কোথা থেকে এক বাঙালি সাধুবাবা পাকড়ে তাকে প্রশ্নবাণে নাস্তানাবুদ করে ছাড়লেন…“কেন এ লাইনে এসেছেন?“‚ “বাড়িতে মাকে কে দেখছে?“ ইত্যাদি ইত্যাদি | আমার হাতে নতুন কেনা হ্যান্ডিক্যাম‚ ফলে ছবি আঁকার পাশাপাশি ঘুরে ঘুরে প্রচুর ভিডিও তুলে কাটালাম | পরদিন সকাল সকাল নেমে রওয়ানা দেবার কথা‚ প্রথমে চোপতা-র উদ্দেশ্যে |
6 Responses
দুরন্ত! বিশেষ একটা বিশেষণ ব্যবহার না করে সহজ সরল করে প্রকৃতির বর্ণনাসহ যাত্রার বিবরণ আর তার সঙ্গে দৃষ্টিসুখ চিত্রণ। আহা আহা!!
DEBASHIS BABU LIKHECHHEN BHALOI TOBE KEDARNATHER POTHE JE NADITI PORHE TAR NAM MANDAKEENI , ALAKANANDA NOY ; ALAKANANDA BADRINATHER POTHE. EI DUI NADI SANGAM HOLO RUDRAPRAYAGE — SEKHAN THEKE ALAKANANDA ARO NICHE BHAGIRATHIR SATHE MISECHHE DEVAPRAYAGE. KISHOR BAYASE AMIO GIECHHI OI SAB TIRTHASTHANE; TAKHAN BUS CHHILO NA — PADABRAJE DHARASU THEKE PRAY 300 MILE — GANGOTRI , KEDARNATH O BADRINATH.. !!!
AR RATRI BASH PATHER DHARE CHATITE — ARTHAT KUNRHETE !!! APURBA SEI YATRA AR ABHIGGATA
ARUP BANDYOPADHYAY ( BOLTON UK )
Ashadharan…………..
opurbo. onek bochor dhore apnar lekha porchi. simplicity he ki charm apnar lekha name porle bojha na
কেদারনাথ মন্দির মন্দাকিনী নদীর ধারে, অলকানন্দা নয়। বরং অলকানন্দার তটে বদ্রিনারায়ান।
কি সুন্দর মনমুগ্ধকর আঁকা। হাই রেজোলিউশন ডাউনলোড পেলে ঘরে বাঁধিয়ে রাখতাম
এই ট্রাভেলগ গুলো নিয়ে দেবাশীষ বাবুর বই হওয়া উচিত।