পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রতি বছর আছড়ে পড়া কয়েক হাজার উল্কাখণ্ডের মাত্র কয়েকশ পাথরই ভূপৃষ্ঠে পৌঁছাতে পারে। এখনও অবধি পৃথিবীর বুকে আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় উল্কাখণ্ডটি পাওয়া যায় নামিবিয়াতে। ১৯২০ সালে ২.৭ মিটার আকারের পাথরটি আবিষ্কৃত হয়। ষাট টন ওজনের পাথরটির নাম ‘দ্য হোবা’। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেই কম বেশি উল্কাপাত হলেও এর খুব কমই পাথর হিসেবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে।
কিন্তু গত বছরের একদম শেষের দিকে ছোট মাপের উল্কা বৃষ্টি হয়েছিল তুরস্কের বিনগল অঞ্চলে। হঠাৎ করেই গ্রামে এই নতুন ধরনের পাথরের টুকরো দেখতে পেয়ে প্রথমটায় পাত্তা দেননি গ্রামবাসীরা। অমসৃণ দেখতে পাথরগুলোকে প্রথমে তারা আর দশটা সাধারণ পাথরই ভেবেছিলেন। তবে আচমকাই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের মতামতের ফলে বদলে যায় গোটা গ্রামের দৃশ্য। ওই অধ্যাপকই সারিচিচেক নামক গ্রামটির বাসিন্দাদের জানান, এ পাথরগুলো আসলে উল্কাখণ্ড।
এরপর থেকেই গ্রামবাসীরা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েন সেই পাথর খুঁজতে। সারিচিচেক থেকে পাওয়া উল্কা খণ্ডগুলি বাইরের দেশে বিক্রি হচ্ছে গ্রাম প্রতি সর্বোচ্চ ষাট ডলারে। ভারতীয় মুদ্রায় যা চার হাজার টাকার সামান্য বেশি। কুড়িয়ে পাওয়া এই পাথর বিক্রি করে ইতিমধ্যেই লাখপতি হয়ে গেছেন গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দাও। এমন দুষ্প্রাপ্য পাথর থেকে আয়কে, ভাগ্যের কেরামতি বলেই মনে করছেন গ্রামবাসীরা।
এই খবর প্রচারিত হওয়ার পর রাশিয়া, জার্মানি ও ডেনমার্কের রত্ন ব্যবসায়ীরাও ভিড় জমিয়েছেন গ্রামটিতে। এখনও অবধি এই গ্রাম থেকে বিক্রি হওয়া উল্কা পাথরের মূল্য প্রায় চার লক্ষ মার্কিন ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় দু কোটি আশি লক্ষ টাকারও বেশি। সংগ্রাহক ও গবেষকদের কাছে মহামূল্যবান এই উল্কা খণ্ডের সবচেয়ে বড় মাপের যে খণ্ডটি পাওয়া গেছে সেটির ওজন দেড় কেজি। পাথর বিক্রির টাকায় বেশ কজন দরিদ্র গ্রামবাসী বাড়ি-গাড়িও কিনে ফেলেছেন।
প্রসঙ্গত, এর আগেও অস্ট্রেলিয়া, আন্টার্কটিকা, উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকা, আরব উপদ্বীপ, সাহারা মরুভূমি ও রাশিয়াতেও আবিষ্কৃত হয়েছিল উল্লেখযোগ্য এই ধরনের উল্কাখণ্ড।