আমি শ্রী ঘঞ্চি। আবার হাজির হয়েছি দুটো কুকথা নিয়ে।
খবর পেলাম, মাত্র দিন দুয়েকে কুকথা বলবার পরপরই আমি কুনজরে পড়েছি। এত তাড়াতাড়ি সাকসেস পাব ভাবিনি। নিজেকেই নিজে অভিনন্দন জানাই। নিজেই নিজের পিঠ চাপড়াই।
শুনলাম, আমার বাপ এন্ড ফোরটিন পুরুষ তুলে গালাগালি হয়েছে। ভেরি গুড। আমি ঘঞ্চি, আসলে কঞ্চি, খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমার পিতা হলেন বাঁশ। আমার পিতামহ হলেন বাঁশঝাড়, আর প্রপিতামহ স্বয়ং বাঁশবন। আমার কুকথা পড়ে কেউ কেউ বাঁশঝাড়, বাঁশবনকেও ছাড়েনি। মানে বাপ ঠাকুরদা তুলে গালি দিয়েছে। বেশ করেছে। ঠিক করেছে। আমি ভেরি হ্যাপি। আমার শ্লোগান হল—
‘কুকথার এটাই গুণ/ সত্য হলে মারবে তূণ।
ঠিক জায়গায় সিঁধেছে/ তোমার বুকে বিঁধেছে।’
তাই এতো হুমকি হামকি, ধমকি ধামকি, গালি মালি। তেল মারা মিথ্যে সুকথায় কিছু হয় না। যারা তেল ভালবাসে তারা খুশি হয়, বাকিরা মুক বেঁকায়। সত্যি কথার কুকথায় সবাই খুশি হয়।
কুকথা পড়ে আমার ওপর যারা কুনজর দিয়েছে, গালি দিয়েছে যারা, তাদের ঘঞ্চির ওরফ থেকে বলি—‘খমরেডদের খানাই খাল খেলাম।’ এই রে! ‘খ’ এর জায়গায় ‘ব’ হবে না ‘ক’ হবে? নাকি ‘স’ হবে না ‘জ’ হবে? কোথাও আবার ‘ল’ হবে না তোয় ? হায়রে, মনে করতে পারছি না। মনে হয়, আর একটা জবরদস্ত গালি খেলে মনে পড়ে যাবে। গালি? নাকি পশ্চাতে লালি? লাথিকে ভালবেসে বললাম, ‘লালি’।
তবে আমি জানি, আজ কুকথায় খমরেডরা আমার ওপর খেপেছে, কাল তোলামূলরা চটবে। এই রে ‘তোলা’র জায়গায় ‘তৃণ’ হবে না ‘ঘৃণ’ হবে? মূলের জায়গায় ‘বাজ’ হবে না ‘রাজ’ হবে? মনে পড়ে না যে! সে যেই হোক ওরাও তখন খেলাবে। এই রে আবার ভুল? ‘খ’ এর জায়গায় ‘কে’ হবে না তো? তাহলে খুব লাগবে। ‘খেলানি’ খেলে তখন আবার বমরেডরা ‘বাল বেলাম’ বলে জড়িয়ে ধরবে।
‘কুকথার এটাই নুন/
পক্ষে হলে গাইবে গুন।’
তাই পক্ষে নেই ভাই। আবার ঘঞ্চির কুকথা শুনে একদিন ‘দাজেপি’রাও বিরাট চটবে। দেখ কাণ্ড, আবার গোলমাল। ‘দা’ এর জায়গা ‘বি’ হবে না ‘দাঙ্গা’ হবে?
যাই হোক কুকথাকে চিরকালই কুকথা শুনতে হবে। তবেই সে হবে পিওর কুকথা।
যাক, আশাকরি আপনাদের সবার ভোটপর্ব নির্বিঘ্নে সমাপন হয়েছে। ভালেবেসে এবং কেশে, রেগে এবং ভেগে, আদরে এবং বঁাদরে, লোভে এবং তলোয়ারের কোপে, চুরিতে এবং মেদ জমা ভুড়িতে, হিংসেতে এবং হিসিতে ভোট শেষ। আমারও তাই হয়েছে। ভোটপর্বে আমি খুশি, তবে সবথেকে বেশি খুশি ‘ভোভা’তে। ‘ভোভা’ কী জানেন? ‘ভোভা’ হল ‘ভোটের ভাষন।’ এবারের নেতানেত্রী এবং মেতামেত্রীদের ( মেতামেত্রী কাকে বলে জানি না। জানলেও বলব না। ঘঞ্চি বলে কি প্রাণে ভয় নেই?) ভোটের ভাষন আমাকে আবেগে থরথর করেছে। প্রাণে তুলেছে হিল্লোল। জেগেছে তেজ।
‘মেরা পাস শিক্ষা হ্যায়, ভদ্রতা হ্যায়, রুচি হ্যায়। তেরা পাস কেয়া হ্যায়?’
‘মেরা পাস ভোট কা ভাষন হ্যায়...ভোট কা ভাষন হ্যায়...’
আমি ঠিক করেছি, এই অভিজ্ঞতা আমি ফেলতে পারব না। যা দেখেছি, যা শুনেছি তুলনা তার নাই। তাই পাঠ্যপুস্তকে ‘ভোট ভাষনের শিক্ষা’ নামে একটি অধ্যায় যুক্ত করবার জন্য বিশেষ সচেষ্ট হব। একবারে বিদ্যালয়ে স্তরের সিলেবাস থেকে শুরু হবে। যারা সিলেবাস কমিটিতে আছেন তাদের হাতে পায়ে ধরব। বলব,‘‘দাদাগো, কাকাগো, মামা গো, দিদিগো ( আমাদের দেশে সরকারের যে কোনো কমিটিতে জায়গা পেতে গেলে কারও না কারও দাদা, কাকা, মামা, দিদি হতে হয়।), আমার কথা শোনেন। অঙ্ক, ইতিহাস, ভূগোল পরে হবে, ছেলেমেয়েদের আগে ভোটের ভাষন শেখান। ভোটের ভাষনে রপ্ত তো পকেট হবে তপ্ত। সব লেখাপড়া শেষ ইনকামে। ল্যাঙ্গুয়েজ অব্ রক হল ‘কামাই’ । কামাই তো সবথেকে বেশি পলিটিক্সে। পলিটিক্সে নিজেকে ঠিকমতো প্লেস করতে হলে ভোট এক্সামে পাশ করা চাই। তার জন্য চাই ‘ভাষন।’ তাই ভাষনের লেসন শুরু হোক ছোটোবেলা থেকে। পরে যে সাইন করতে পারবে করবে।
সিলেবাসে থাকবে প্র্যাকটিকাল আর থিওরি। প্র্যাকটিকাল ক্নাসে শেখানো হবে উচ্চারণ। বাংলা, ইংরংজি, হিন্দি কোনো উচ্চারণই যেন শুদ্ধ না হয়। দেশের অগণিত মূর্খ (জোর করে করে রাখা) মানুষের জন্য ভাষনদারকেও হতে হবে মূর্খ। গলায় কখনও থাকবে ধমক। ‘চড়িয়ে দাঁত ফেলে দেবে।’ কখনও থাকবে সুর। ‘দিদিইইইইই।’ আবার কখনও হবে ‘লেনিন ভয়েস’। দুনিয়া কাঁপানো ব্যাণ্ড বিটলস্ গ্রুপের গায়ক লেনন এর যদি ‘লেনন ভয়েস’ থাকতে পারে, তাহলে এখানকার ঘুঁটেপুকুরের কমরেডের কেন ‘লেনিন ভয়েস’ থাকবে না? দঁাত চেপা গম্ভীর। ‘কমরেড, পূঁজির সঙ্গে শোষন সেটাই মোদের তোষন।’ লেনিন ভয়েস যেহেতু পুরোনো দিনের রাশিয়া থেকে আমদানি করা উচ্চারণে রুশ ভাব আনতে হবে।
প্র্যাকটিকালের সঙ্গে চালাতে হবে থিওরি। একটা আইডিয়াল ভাষণ থাকতে হবে। এবারের ভোটপর্বে পাওয়া হাতে কলমে (থুড়ি কানে কলমে) পাওয়া শিক্ষে থেকে সেই পিস লিখতে হবে। পিস এমন হবে যাতে পাবলিক শুনে শিস্ দেয়। তবেই না আইডিয়াল ভোটের ভাষণ। উদাহরণ দিয়ে এবারের কুকথা শেষ করি। এটা একটা অ্যাসরটেড্ ভাষন। সব দলের কথাই একসঙ্গে থাকছে। পাঠ শেষে নিজের নিজের মতো করে আলাদা করে নিতে হবে।
‘মিঁতরো, ভাই অর বোন হো, উলু দেওয়া মা বোনেরা, কমরেড সাথী,
আমাকে ভোট না দিলে মেরে পিঠের ছাল তুলে দেব। এজেন্সি লেলিয়ে জেলে পুরে দেব। গাড়িতে বাড়িতে তল্লাসি করে ফলস কেস দেব। আমি ছাড়া সবাই মিথ্যে বলে। আমি ফুলের পাপড়ি ছাড়াই। আমি নকুলদানা বিলোই। আমি ভিয়েতনামের বাতেলা ঝাড়ি। আমাকে ভোট না দিলে আপনি শালা দেশদ্রোহী। আমাকে ভোট দিলে না আপনি শালা মাওবাদী। আমাকে ভোট না দিলে আপনাকে শালা পাছা দেখাব। বিরোধীরা সব দাঙ্গাবাজ, তোলাবাজ, পুঁজিবাজ (পূঁজিবাদ), রফেলাবাজ। আমাকে ভোট দিলে সব পাবেন। তিন টাকা কিলো সুপার স্পেসালিটি হাসপাতাল। ঘরে ঘরে মন্দির। পাড়ায় পাড়ায় রুশ বিপ্লব। গ্যারাজে মিগ সিক্সটিন। আমি দেশের রক্ষক। আমি দেশের ভক্ষক। আমি দেশের তক্ষক। দিদি স্পিডব্রেকার, দাদা ক্রিমকেকার (নিরামিষ), মেজদা ফ্যামিলিচেকার, দাদু ন্যানো মেকার, তাই আমি সেরা, আমাকে ভোট দিয়ে আপনি গোল্লায় গেলে যান দেশকে উদ্ধার করুন।
বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ এই ভাষনের সঙ্গে কারও কোনো মিল পাওয়া গেলে তা মিথ্যা বলে জানতে হব।