যুদ্ধক্ষেত্র থেকে স্বামী ঘরে ফিরছে, কফিনবন্দি হয়ে। জঙ্গি নিধন অভিযানে গিয়েছিলেন মেজর বিভূতিশঙ্কর ধৌন্দিয়াল৷ পুলওয়ামা হামলার মাস্টারমাইন্ড জইশ জঙ্গি কামরান নিহত হলেও, অপারেশনের সাফল্য দেখে যেতে পারেননি মেজর। জঙ্গির গুলিতে শহিদ হন তিনিও৷ সোমবার রাতে দেরাদুনে নিজের বাসভবনে নিয়ে আসা হয় ৩৪ বছরের মেজর বিভূতিশঙ্করের মরদেহ।
স্বামীর প্রয়াণের খবরে ভেঙে পড়লেও স্ত্রী নিকিতার চোখে মুখে তখন শুধুই গর্ব৷ একজন শহিদ-এর স্ত্রী তিনি। তাঁকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। যে বীরত্বের সঙ্গে তাঁর স্বামী দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন তাঁকে চোখের জলে শেষ বিদায় জানালে হবে না।
মাত্র এক বছর আগেই দেরাদুনের বাসিন্দা ৩৪ বছর বয়সী আর্মি মেজরকে বিয়ে করেছিলেন নিকিতা কৌল। নিজেদের বিয়ের আগের সহজ প্রেমের মিষ্টি গল্পের কথাই এই অসময়ে বারবার মনে পড়ছিল তাঁর। নিকিতা জানান, “ও বাসে ওঠার আগেই ফোনে শেষ কথা হয় আমাদের।”
দেরাদুনে তখন অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে। স্বামীর কফিনের সামনে দাঁড়িয়েই, তেরঙ্গা জড়ানো স্বামীর দিকে শেষবারের মতো চুম্বন ছুড়ে দিলেন নিকিতা আর বললেন, ‘‘আমি সত্যিই গর্বিত, যে আমি তোমার স্ত্রী। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমি তোমাকে ভালবেসে যাব। আমরা সবাই তোমাকে ভালবাসি৷ তুমি তাদের জন্য প্রাণ দিয়েছো, যাদের তুমি চেনোও না৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের জন্য নিজের জীবন দিতে এতটুকুও ভাবনি তুমি৷’’
রীতিমত শক্ত থেকেই স্বামীকে শেষ বিদায় জানিয়ে বললেন, “আমি জানি, তুমি এখানেই থাকবে, আমাদের আশেপাশে। আমি সবাইকে অনুরোধ করছি, কেউ সমবেদনা জানাবেন না। মন শক্ত করে মানুষটাকে স্যালুট জানান”। ভিড় করে সেখানে উপস্থিত শত শত মানুষ তখন স্লোগান তুলেছে ‘বন্দে মাতরম’, ‘ভারতমাতা কি জয়’। এই বছরই এপ্রিলে প্রথম বিবাহবার্ষিকী পালনের জন্য বাড়িতে আসার কথা ছিল মেজরের।
মেজর বিভূতিশংকর ধৌন্দিয়াল সহ আরও চারজন সৈনিক- সিপাই হরি সিং (২৭), হাবিলদার শেও রাম (৩৭)এবং সিপাই অজয় কুমার (২৭) শহিদ হয়েছেন এই অভিযানে।