শিলিগুড়ি ও ব্রিগেড একই দিনে রাজ্যের দুটি প্রান্তে মাত্র দু’ঘন্টার ব্যবধানে মোদির দুটি জনসমাবেশে লোকসমাগমের উত্তাল তরঙ্গ দেখে বোঝার উপায় নেই কয়েক মাস আগে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে অমিত মোদির বিজেপি হেরেছিল। তাহলে সেই ঝোঁক কি সম্পূর্ণ বিলীন ? মমতার নেতৃত্বেও ব্রিগেডে জড়ো হয়েছিল
ফেডারেল জোট। তাছাড়া বাংলায় মমতার জেদ আর তেজ প্রতি মুহূর্তেই ঝলসে উঠছে পাহাড় থেকে সমতলে।
২০১৪ সালে মোদি-হাওয়াও বাংলাকে টলাতে পারেনি।
তবে বিজেপির ভোট বেড়েছে, বিধানসভা ভোটে গণ্য হয়ে উঠেছে। যদিও আসন পেয়েছে কুল্যে খড়গপুরে বাম-কংগ্রেসের জোটকে হারিয়ে। এবারের লোকসভা ভোটের আগে সেই আঁতাঁত মাঝপথে ভেস্তে যায়। দুই দলই আলাদাভাবে লড়ছে। বাংলাতেও কংগ্রেসের প্রধান শত্রু বিজেপি, সিপিএম ও তৃণমূল। সিপিএম, তৃণমূলেরও তাই। অতএব, যেসব লোকসভা আসনে কংগ্রেসের জেতার সম্ভাবনা প্রায় নেই, সেখানে কংগ্রেস সমর্থকেরা কোন দিকে
ঝুঁকবেন ? অধিকাংশ জায়গাতেই বামেরা ভোট পাবেন না। কী করবেন তাঁরা?
প্রতিশোধস্পৃহা থাকবেই। তৃণমূলের আসন কমাতে কী তাঁরা লড়ে যাবেন ? নমোর দুটি সভার ভিড় দেখে বিজেপি বঙ্গীয় অনুগামীদের বাংলা দখলের স্বপ্ন থমকে নেই । অথচ স্বল্প দিনের নোটিশে দুটি সভা সফল করার নির্দেশে বেজায় বিপাকে পড়েছিল রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্ব। সভার সাফল্য নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান ছিলেন নিজেরাই। ক্রেডিট সর্বভারতীয় সভাপতি কিংবা রাজ্য নেতৃত্বের যে-ই নিক বা পাক, রাজ্যে ভোটের বাক্সে তার ফায়দা কতটা মিলবে ?
মমতা ২০১৯-এ মোদিকে ফিনিশ করতে যতটা তৎপর মোদি-শাহ লোকসভা নির্বাচনে পাখির চোখ করেছেন পশ্চিমবঙ্গকে। অথচ রাজ্য বিজেপি বহুবার ঘোষণা করেও ব্রিগেডে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনসভা করতে ব্যর্থ হয়েছে। বহুবার তারিখের পর তারিখ বদল করে বিজেপির একাধিক রাজ্য নেতা সাংবাদিক বৈঠক করেছেন। শেষমেশ ব্রিগেড বানচাল হয়েছে। ঠিক ছিল লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যে একাধিক জায়গায় সভা করবেন নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ। ইতিমধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে বিরোধীজোটের ব্রিগেড দুর্দান্ত ভাবে সফল হয়। সেই ব্রিগেডের পর মালদহে অমিতের সভার সাফল্য নিয়েও বেশ চিন্তায় পড়ে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। সে যাত্রায় কোনওক্রমে নিস্তার পায় এ রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্ব।
মাত্র ১৫ দিন আগে বিজেপি ঘোষণা করে, ব্রিগেড ও শিলিগুড়িতে একইসঙ্গে দুটি সভা করবেন প্রধানমন্ত্রী। এবারও স্বল্প দিনের নোটিশে ব্রিগেড ও শিলিগুড়িতে মোদীর জনসভা নিয়ে বিজেপির অন্দরে সংশয় প্রকাশ করেন রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গে একই দিনে প্রধানমন্ত্রীর সভা করতে বদ্ধপরিকর বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। সভার দিনক্ষণ ঘোষণার পরই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। কারণ একই দিনে দুটি সভা মানে বড় ঝুঁকি নেওয়া। ফলে তাঁরা একই দিনে দুটি সভা করার পক্ষপাতী ছিলেন না । দুটি সভা করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। তিনিই রাজ্য নেতৃত্বকে নির্দেশ দেন দুটি সভার আয়োজন করতে। মাসকয়েক আগেই যথেষ্ট সফল ব্রিগেড সমাবেশ করেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। ফলে ভোটের আগে কোনও অবস্থাতেই যাতে মোদির ব্রিগেড আয়োজনে কোনওরকম খামতি না থেকে যায়, তার জন্য ব্রিগেডে লোক জমায়েতের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেন সর্বভারতীয় সভাপতির দপ্তর। ব্রিগেড এবং শিলিগুড়ির সভা সফল করতে রাজ্য নেতৃত্বকে একরকম চাপেই ফেলে দেয় কেন্দ্রের শীর্ষ নেতৃত্ব। ফলে মোদির দু’দুটি সভার সাফল্য নিয়ে দোলাচলে থাকে রাজ্য নেতৃত্ব। ব্রিগেড বা শিলিগুড়ি ফ্লপ শো হলে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে মুখ পুড়বে বাংলা বিজেপির৷
একই দিনে রাজ্যের দুটি প্রান্তে মাত্র দু’তিন ঘণ্টার তফাতে দু’দুটি জনসভায় লক্ষ লক্ষ মানুষ জড়ো করা কেবল কঠিন নয়, বেশ কঠিন কাজ এ রাজ্যের বিজেপির পক্ষে। এ হেন অবস্থায় দুটি সভার সাফল্য ঘিরে যথেষ্ট সন্দিহান ছিল রাজ্য বিজেপি৷ তবে ফাঁপড়ে পড়েই তারা অতিসক্রিয় হয়ে উঠেছিল। কারণ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০১৪ সালের মোদির ব্রিগেড রেকর্ড ভাঙতে হবে। দক্ষিণবঙ্গের প্রতিটি জেলা নেতৃত্বকে হাজির করতে হবে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ হাজার লোক।
প্রথমে শিলিগুড়িতে ফলে উত্তরবঙ্গের বিজেপি নেতৃত্ব এবং সেখানকার দলীয় কর্মী, সমর্থকরা আর ব্রিগেডমুখো হতে পারবেন না। শুধুমাত্র দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির উপর নির্ভর করে নরেন্দ্র মোদির ব্রিগেড সমাবেশে দশ লক্ষ লোক জমায়েতের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হবে বঙ্গ বিজেপির নেতাদের। দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির উপর ভরসা করে এই টার্গেট পূরণ করা আদৌ কতটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল বিজেপির অন্দরেই। তবে হ্যাঁ পাঁচ বছর আগে রাজ্যে বিজেপির যে সাংগঠনিক পরিস্থিতি ছিল, এখন তা আমূল পরিবর্তিত হয়েছে। ব্রিগেডে লোক সমাগম অন্তত সে কথাই বলে। তার চেয়েও ব্রিগেডের ভিড় জেলা থেকে রাজ্য বিজেপির সর্বস্তরের নেতাদেরই অক্সিজেন বাড়িয়ে দিল।